Monday, March 3, 2025

রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কিনা জেনে নিন Roja Rekhe Game Khela Jabe Kina Jene Nin

রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি?

একটা সাধারণ দিনের থেকে আমাদের রমজান মাসে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। কথা বলার ক্ষেত্রে, খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে তেমনি এই গেম খেলা নিয়েও। তবে অনেকেরই এরকম প্রশ্ন থাকে রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি? রোজার মাসে গেম খেললে গুনাহ্ হবে না? আরো নানান চিন্তা ভাবনা মাথায় আসতে থাকে। রমজানের এসব খুটিনাটি চিন্তা ভাবনা রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি এই নিয়ে সব সমস্যা সমাধান করবো।


শরিয়াতে এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো রোজা না রাখা অবস্থায় বৈধ কিন্তু রোজা পালনরত অবস্থায় সেগুলো করা নিষেধ। তেমনি রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি এর উত্তরে বলা যায় যে খেলা আল্লাহর স্মরণ থেকে মানুষকে গাফেল রাখে সে সফল প্রত্যেক খেলাই নাজায়েজ। এই খেলা গুলো এর অন্তর্ভুক্ত। যে খেলা রমজান ছাড়া জায়েজ নেই সে খেলা রমজানেও জায়েজ নেই।


রোজার মাস একটি রহমতের মাস। এ মাসে আল্লাহর কাছে যা দোয়া করবেন তাই কবুল হবে। এই রোজার মাসে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। দিন- রাত তার ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে، কারণ বাকি মাসের চেয়ে এই রোজার মাসে যদি আপনি ইবাদত করেন তাহলে সেটার সোওয়াব অনেক বেশি হয়। কিন্তু আপনি যদি রোজার মাসে সব সময় গেম খেলেন আল্লাহর ইবাদত রেখে তাহলে আপনি রোজার সোওয়াব পাবেন না।


রোজা রেখে গেম খেলা কি হারাম?

রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি বা যদি রোজা রেখে কোনো গেম খেলা হয় তাহলে কি তা হারাম বলে গণ্য হবে? যেকোনো গেম খেলতে খেলতে নামাজ, রোজা, পড়াশোনা, নিজের দায়িত্ব সব ভুলে যান, মনে হয় সেই কাজ এসব তাহলে সেটা হারাম। গেম গুলো আপনাকে দেখায় সবাই আপনার শত্রু। খেলে উঠে আশেপাশের সবাইকে অনেক সময় শত্রু মনে হয়। 


আবার রেগে গেলে মনে হয় হাতে কিছু থাকলে গেমের মত সব গুলোকে যদি শেষ করতে পারতাম। যদি মনে হয় রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি বা তা হারাম হবে কি? তাহলে একটু খেয়াল করে দেখবেন এই গেমগুলো খেলতে খেলতে এক সময় আপনার গেম আর বাস্তবতার মধ্যে কোন পার্থক্য মনে হয় না। রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি এই নিয়ে কোরআনে উল্লেখ আছে-


"যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নাজিল করি। তারপর সে তার সঙ্গী নাই।" ( সূরা যুখরুফ: আয়াত-৩৬) যে কোনো প্রকার জিনিস যা আল্লাহকে বিশ্বাস অথবা তাকে মনে করা অথবা তাকে ভয় করা থেকে আপনাকে ভুলিয়ে রাখে, আল্লাহর উপর বিশ্বাস নষ্ট করে, আপনাকে মানুষ থেকে পশুর মত আচরণ করতে বাধ্য করে তাই হারাম।


কিন্তু এই খেলাটা যদি নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সময় নষ্ট না হয়, আপনাকে মারমুখো পশুতে না পরিবর্তন করে এবং অশ্লীলতায় না ডোবায় তা হলে হয়তোবা এটি হারাম নয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালা বলেন- 'আদম সন্তান সময়কে গালি দেয়। অথচ আমিই সময় এবং কাল, রাত- দিন আমারই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।( সহীহ মুসলিম হাদিস-৫৬৯৭)

রোজা রেখে কি ধরনের গেম খেলা যাবে

রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি এই মর্মে বলেছি যে ধরনের গেম খেললে আল্লাহ নারাজ হয় সেই ধরনের গেম খেলা উচিৎ নয়। রমজান মাসের প্রতিটি সময় বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া, তওবা ও নফল নামাজের মাধ্যমে কাটানোর চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক। মোবাইলে গেমস খেলা মানে নিজের অমূল্য সম্পদ সময়কে অপচয় করা এবং অল্প থেকে ধীরে ধীরে এটা নেশায় পরিণত হওয়া। সুতরাং একজন মুসলিম হিসাবে এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। 


আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু তায়ালা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'একজন একজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণ তার একটি লক্ষণ হলো যে, তার জন্য জরুরী নয় এমন কাজ সে ত্যাগ করে। (জামে তিরমিযী: ২২৩৯) রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি এই নিয়ে আরো বলতে চাই, যেসব কাজ রমজানের বাইরে পাপ ও গুনাহ হিসেবে গণ্য, সেসব কাজ রমজানে করা আরো বেশি মারাত্মক পাপ ও গুনাহ হয়।


আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'তোমাদের কেউ সাওম পালন করলে সে যেন পাপাচার লিপ্ত না হয় এবং মূর্খের মতো আচরণ না করে।' (আবু দাউদ, হাদিস :২৩৬৩) গেম খেলা এমনিতেই নাজায়েজ। তবে রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি বা পরবর্তীতেও কোনো গেম খেলা যাবে কি এটা নির্ভর করে আপনার গেমের ধরনের ওপর। যদি সেটা এডুকেশনাল হয় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। এছাড়া রোজা অবস্থায় গেম খেললে ইন্দ্রীয় তৃপ্তি হয়। যা করলে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন রোজা না রাখতে।

রোজা রেখে দাবা খেলা যাবে কি

রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি বা রোজা রেখে দাবা খেলা যাবে কিনা এটা জানার আগে জানতে হবে কোরআনে এ নিয়ে কিছু উক্তি আছে কিনা। কোরআনে দাবা খেলা সম্পর্কে কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উক্তি পাওয়া যায় না। এরপর নবী (সাঃ) এর হাদিসে কি এ সম্পর্কে কিছু পাওয়া যায়?  না পাওয়া যা নি কিছু। তবে হ্যা লুডু খেলা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা উচ্চারিত হয়েছে হাদিসে। 


এক হাদিসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন - "যে লুডু খেলবে সে সুস্পষ্ট আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হতে বেরিয়ে গেল।" কিন্তু দাবা খেলা সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেনি। তবে হ্যাঁ, হযরত আলী (রাঃ) এর একটি উক্তি এক্ষেত্রে পাওয়া যায়। বাইহাকীর সনানুল  কুবরা (১০/২১২) এ বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী (রাঃ) একবার দাবা খেলার পাশ দিয়ে অতিক্রম কালে বলেছিলেন, 'এসব কিসের মূর্তি  যেগুলোর উপর তোমরা উপুর হয়ে আছো।"


এই উক্তিটা সুস্পষ্ট ভাবে অবৈধতা প্রমাণ করে না। আমার বৈধতা ও প্রমাণ হতে পারে না। কারণ এখানে নিছক ভর্ৎসনা থাকলেও এ থেকে বিরত থাকার আদেশ ছিল না। আর শরীয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো, 'সারিহুন নাস' তথা সুস্পষ্ট উক্তি না পাওয়া গেলে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান দেওয়া উচিৎ নয়। এজন্য পরবর্তীকালে শরীয়া- বিশেষজ্ঞ বিধানের বিষয়ে মতবাদ করেছেন। অধিকাংশই অবৈধতার পক্ষে এবং বৈধতার তার কক্ষে মতামত দেন।


তবে অনেকেই বলেন যে গেম খেলা মানে সময় নষ্ট করা। যদি সেটি শিখনীয় বিষয়ের হয়ে থাকে তাহলে খেলা যাবে তাও কিছু শর্ত সাপেক্ষে।

১. জুয়া বা হার জিতে টাকার শর্ত থাকতে পারবে না। 

২. অবসর সময়ে খেলতে হবে। কাজের সময়ে বা নামাজের সময় খেলা বৈধ নয়।

৩. কোনো রকমের ঝগড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাবে না।

মোবাইল বা কম্পিউটার গেম খেলা কি জায়েজ

মোবাইল বা কম্পিউটারে কিছু খেলা রয়েছে, যেগুলো হারাম বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলোর সঙ্গে যদি হারাম কিছুর সংশ্লিষ্টতা থাকে, তাহলে এগুলো খেলা জায়েজ নেই। কিছু খেলা আছে বিনোদনের জন্য বা অবসর সময় কাটানোর জন্য অথবা যেগুলোর সঙ্গে সরাসরি কোনো হারাম বিষয় নেই, তাহলে সেই ধরনের খেলা জায়েজ রয়েছে। ইসলামে যে খেলা গুলো সুস্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে হারাম করা হয়েছে, সেগুলো খেলতে পারবেন না।


তার মধ্যে দাবা, কেরাম, তাস খেলা জাতীয় খেলা আপনি খেলতে পারবেন না। তবে এসব খেলার ক্ষেত্রে জুয়ার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকা যাবে না। যদি জুয়ার সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে হালাল খেলাও হারাম হয়ে যাবে। এটা তখন জায়েজ হবে না। আজকের এই পোস্টে আমি উল্লেখ করে দিয়েছি রোজা রেখে গেম খেলা যাবে কি। আশা করি আপনার উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন। 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: